সব নিষিদ্ধ’র বিশ্ববিদ্যালয়
এতদিন মুখ অনেক কষ্টে বন্ধ করে বসে ছিলাম। পরপর এতগুলো ঘটনা ঘটে যাবার পরও। কিন্তু আর নয়!!
মূল প্রসঙ্গটা আসলে আমাদের ক্যাম্পাস নিয়ে!
(১) যেখানে ঢাবিতে ডাস্টবিন পর্যন্ত রঙ করে ক্যাম্পাস রাঙায় সেখানে আমাদের শাবিপ্রবিতে যেকোন সৌন্দর্যবর্ধক গ্রাফিটি কিংবা যেকোন আর্ট নিষিদ্ধ।
(২) টঙে ভাত রাখা নিষিদ্ধ, ভাত কেবল ক্যাফেটেরিয়াতেই পাওয়া যাবে। এমন জায়গায় এই নিয়ম, যেখানে খাবারের মান এবং তার দাম নিয়েই মনে সংকোচ।
(৩) যেখানে র্যাগিং নিষিদ্ধ ঠিকই, কিন্তু তদন্ত ছাড়া বিচার কার্যক্রমই মূল উদ্দেশ্য! যেখানে নিয়মটা ঠিক এমন যে, কোনরূপ তদন্ত ছাড়াই ডিরেক্ট অ্যাকশন! স্বাধীন দেশে স্বৈরাচারী আচরণ!
(৪) যেখানে নানা বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করে আমাদের ভিসি হিরো সাজতে চাচ্ছেন, ঠিক সেখানে আমাদেরই শিক্ষক আমাদেরই ক্যাম্পাসে সকলের সামনে ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত হোন।
সারা দেশের জন্য মানুষটা যদি হয়ে থাকেন জাফর ইকবাল, কিন্তু তিনি আমাদের জন্য একজন শিক্ষক, তার উপরে তিনি একজন মানুষ! যেখানে একজন মানুষেরই জীবন ঝুঁকিপূর্ণ এই ক্যাম্পাসে, যেখানে একজন শিক্ষকের নিরাপত্তাই নির্ধারণ করতে পারছেন না এই ভিসি, সেই ক্যাম্পাসে আমরা শিক্ষার্থীরা কতটুকু নিরাপদ?
কিংবা আজকের স্যারের উপর হামলার ঘটনার পর যে ভিসি আমাদের উপর এই নিয়ম জারি করবে না যে,”এখন থেকে ক্যাম্পাসে মুক্তভাবে হাটাচলা নিষিদ্ধ কিংবা শাবিপ্রবিতে ড্রেস কোড থাকবে” তা কতটুকু নিশ্চিত?
(৫) রাজনীতি নিষিদ্ধ, কিন্তু ভেতরে ভেতরে এর পক্ষের কাজ চলে! এক একজন রাজনীতিবিদের দাপটে আমাদের চলা ভার! চোখে সানগ্লাস আর বাইকের নির্দ্বিধার চলনে আমরা শিক্ষার্থীরাই ভীত!
(৬) ছয় মাসের সেমিস্টার চার মাসে শেষ করতেই হবে এমন যখন নিয়ম তখন প্রশ্ন জাগে আসলে এই সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে এসে শিখছিটা কি? পড়াশুনা কি আদৌ হচ্ছে নাকি গিলে খাচ্ছি আর বমি করছি, মাথার ভেতরটা ভবিষ্যৎ এর জন্য ফাঁকাই পরে আছে।
(৭) হলে চুরি হয়, চোর ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থাকে। ইভটিজিং হয় কিন্তু শাস্তি হয় না। নেহারিপাড়ার হলে নোটিশ যায় ছাত্রীদের বিরুদ্ধে, যেখানে শিক্ষার্থীর নিরাপত্তার প্রশ্ন সেখানে নোটিশ যায় এলাকাবাসীর নিরাপত্তা নিয়ে। কিন্তু সবার উর্ধ্বে ছাত্রত্ব বাতিল।
ক্যাম্পাসটা আমাদের, ভিসির না। ক্যাম্পাস চলে শিক্ষার্থীদের দ্বারা। ভিসি এসে সবার ক্লাস করে না।
শাবিপ্রবিকে “সব নিষিদ্ধের” বিশ্ববিদ্যালয় করার চিন্তা করে যদি ভিসি নিজেকে হিরো ভাবতে চায় তবে তা হবে ভুল।
জানি না কে কি ভাবছে, কিন্তু আমি আমার ক্যাম্পাসকে ঠিক এভাবে দেখতে চাচ্ছি না। এখনই গলা উঁচু না করলে আর কখনোই হবে না।
সারাজীবন একটি কক্ষের পোল্ট্রি ফার্মের ফার্মের মুরগি হয়ে থাকতে চাই না।
লেখক পরিচিতি: মাইশা আনান প্রভা,
শিক্ষার্থী, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
স্থাপত্য বিভাগ, ২০১৬-১৭ সেশন।
লেখাটি সাস্টনিউজের খোলাকলম বিভাগে প্রকাশিত। এ বিভাগে প্রকাশিত সকল মতামতের দায়ভার লেখকের। আপনার সুচিন্তিত মতামত কিংবা প্রবন্ধ (৩০০ শব্দের উর্ধ্বে) পাঠাতে পারেন sustnews24@gmail.com ঠিকানায়